Featured Posts
Recent Articles

বঙ্গবর্ষে বিধাতা ক্ষেন্তিপিসিরূপে আবির্ভূত হইয়াছিলেন


"হে পন্ডিত হুতোম, ক্ষেন্তিপিসি কে ছিলেন? তিনি বঙ্গবর্ষের প্রজাসকলকে কি উপায়ে দুখসাগরে নিক্ষিপ্ত করিয়াছিলেন? কেনই বা বঙ্গবর্ষ কন্টকতীর্থ খ্যাতিপ্রাপ্ত হইয়াছিল?"

এই বলিয়া রাজা জনার্দন করদ্বয় একত্রিত করিয়া দশাঙ্গুলি মুখগহ্বরে স্থাপনা করিয়া প্রবল শক্তিদ্বারা উদর হইতে বাযুবেগ ঊর্ধ্বগতি করিলে হুটাহুট শব্দবাণ নিক্ষিপ্ত হইল। সুতীক্ষ্ণ শব্দবাণ শ্রবণ করিয়া পন্ডিত হুতোম তাঁহার শুভ্রপক্ষ বিস্তারপূর্বক উড্ডীন হইয়া রাজা জনার্দনের সভাগারে আগন্তুকের ন্যায় আবির্ভূত হইলেন। সভাসদগণ পন্ডিত হুতোমের উদ্দেশ্যে প্রণাম জ্ঞাপন করিলেন।

“হে রাজা জনার্দন, পুরাকালে ক্ষেন্তিপিসি নাম্নী এক রাণী ক্ষণকাল বঙ্গবর্ষের শাসনভার অর্জন করিয়াছিলেন। অবতার ক্ষেন্তিপিসি উক্ত বর্ষে অষ্টোত্তরশত নামে পূজিত হইতেন। ক্ষমতাময়ী, মূর্খমন্ত্রী, ক্ষীণবুদ্ধি, স্বল্পমতি, ছলপটু, অস্থিরমতি, মিথ্যাবাদিনী, কুমতি, স্বৈরাচারিণী, কটুবাদিনী, ছদ্মরূপা, যুক্তিহীনা, কুযুক্তিবাদিনী, বদরাগিণী, সজ্জাবিনোদিনী ইত্যাদি নামধারণ করিয়া তিনি বঙ্গবর্ষে বিচরণ করিতেন। ক্ষেন্তিপিসির অঙ্গুলিহেলনে বৃক্ষরাজি পত্রমোচন করিত। কথিত আছে তাঁহার আদেশপ্রাপ্ত না হইলে বঙ্গবর্ষে সূর্যোদয় সম্ভব হইত না। প্রত্যহ প্রভাতকালে ক্ষেন্তিপিসির বন্দনা করিয়া সূর্যদেব নতমস্তকে লজ্জিত হইয়া পূর্বদিক রাঙা করিতেন। ক্ষেন্তিপিসির প্রবল পরাক্রম অবলোকন করিয়া বঙ্গবর্ষের প্রজাগণ দিনান্তে তাঁহাকে সাষ্টাঙ্গ প্রণাম জ্ঞাপন করিয়া কালমোচন করিতেন।” 

“হে জ্ঞানপিপাসু জনার্দন, পরাক্রমশালিনী ক্ষেন্তিপিসি ধরাকে সরা জ্ঞান করিতেন। তাঁহার আদেশে একদা বঙ্গবর্ষের সমগ্র পাঠাগার হইতে ক্ষেন্তিপিসির সমালোচক সমগ্র সংবাদপত্ররাজি নিষিদ্ধ হইয়াছিল। সংবাদপত্র পাঠ অপরাধ - এইরূপ ধর্মাদেশপ্রাপ্ত হইয়া বঙ্গবর্ষের পাঠককূল যারপরনাই আশ্চর্যচকিত হইয়াছিলেন। কথিত আছে, বঙ্গবর্ষের প্রজাগণকে অন্ধকূপে নিক্ষিপ্ত করিয়া কূপমন্ডুকে পরিবর্তিত করিবার অভিপ্রায়ে এইরূপ নির্দেশিত হইয়াছিল। ক্ষেন্তিপিসির শাসনকালে তাঁহার সমালোচকদের অন্ধকূপবাসের সাজাপ্রাপ্তি হইত। যেসকল সংবাদপত্র তাঁহার বন্দনা করিত তাহারা উচ্চমর্যাদাপ্রাপ্ত হইত। ক্ষেন্তিপিসির চাটুকার পারিষদবর্গদ্বারা প্রচারিত ক্ষেন্তিপিসির বন্দনাসমৃদ্ধ সংবাদপত্রসকল বঙ্গবর্ষে পাঠদূষণ সংক্রমণ করিয়াছিল। ইহাতে প্রজাগণের অন্ধত্ব বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হইয়াছিল। যেরূপ কূপমন্ডুক স্বীয়দৃষ্ট মেঘরাশি ও আকাশ অবলোকন করিয়া খগোলের সীমাঙ্কন করিত, তদ্রূপ ক্ষেন্তিপিসি বিবিধ সংবাদপত্রপাঠ নিষিদ্ধ করিয়া বঙ্গবর্ষের প্রজাসকলের জ্ঞানভান্ডারের সীমাঙ্কন করিবার উদ্যোগ লইয়াছিলেন। বিশিষ্ট প্রজাসকল যারপরনাই উদ্বেগ প্রকাশ করিলেও ক্ষেন্তিপিসির কোপভাজক হইবার অনভিপ্রায়ে প্রতিবাদ করিতেন না। সাধারণ প্রজাসকল প্রতিবাদ করিলেও স্বৈরাচারিণী ক্ষেন্তিপিসি কর্ণপাত করিতেন না।” 

“হে সুস্থমতি জনার্দন, পুরাকালে স্বয়ং বিধাতা বঙ্গবর্ষে ক্ষেন্তিপিসির উপর ভর করিয়া ভড়ং করিতেন। যেমন বিধাতার বিধান অবমাননা করিলে পাপকর্ম হইত, তদ্রূপ ক্ষেন্তিপিসির ভড়ং-এর সমালোচনা করিলে সাজাপ্রাপ্তির বিধান শিরোধার্য হইত। বদরাগিণী ক্ষেন্তিপিসি তৎক্ষণাৎ বিধি লেখনের দ্বারা তাঁহার সমালোচকদের বিধি বহির্ভূত কর্মে দোষী সাব্যস্ত করিতেন। তাঁহার শাসনকালে নিত্যনতুন বিধান বঙ্গবর্ষকে কন্টকময় করিয়াছিল। তাঁহার কুশাসনকালে বঙ্গবর্ষ কন্টকতীর্থ নামে প্রসিদ্ধ হইয়াছিল। ক্ষেন্তিপিসির বিধান বঙ্গবর্ষের প্রজাসকলকে কন্টকতীর্থ গমনে বাধ্য করিত। কথিত আছে, তাঁহার আমলে শিল্পবিধান অবলোকন করিয়া শিল্পীরা রাজ্যত্যাগ করিত। তাঁহার শ্রমিকবিধান শ্রমিকবর্গকে ক্ষিপ্ত করিত। ক্ষীনমতি যুক্তিহীনা ক্ষেন্তিপিসির রাজত্বকালে সহস্রাধিক বিধি বিধান সমগ্র প্রজাসকলকে দুখসাগরে নিমজ্জিত করিয়াছিল।” 

হে জননৃপ জনার্দন, আপনি জনসেবার উদ্দেশ্যে আপনার পরিভাষ্যদ্বারা বঙ্গবর্ষের প্রজাসকলকে কালগহ্বর হইতে নিষ্কাশনের উপায় সন্ধান করুন। এই বলিয়া পন্ডিত হুতোম নিঃশব্দে বায়ুরথে ভর করিয়া সভাস্থল ত্যাগ করিলেন। রাজা জনার্দন নতমস্তকে হুতোমকে বিদায় জ্ঞাপন করিয়া রাজকার্যে মনোনিবেশ করিলেন।

Share and Enjoy:

0 comments for this post

Leave a reply

We will keep You Updated...
Sign up to receive breaking news
as well as receive other site updates!
Subscribe via RSS Feed subscribe to feeds
Sponsors
Template By SpicyTrickS.comSpicytricks.comspicytricks.com
Template By SpicyTrickS.comspicytricks.comSpicytricks.com
Popular Posts
Recent Stories
Connect with Facebook
Sponsors
Recent Comments